বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৪

Regular Post




Since this is a universal demand of human kind. Once what I realized and tried to uphold the issues with my little knowledge and efforts. Nowadays this should aloud each and every corner of the universe, so far. This is still an insoluble issue throughout the universe. Each and every man likes colors. The liking starts from his or her childhood. Once they discover it that their likings have been reducing as misused by wrongdoer somehow. Some people are using this color against killing human being elsewhere in the world. Olive color one of the most favorite colors among the people. I like also this color.
I tried to elaborate an idea to stop using colors against killing or repression of human being.

জলপাই রঙের মুক্তি চাই
নাজমুল করিম হেলাল
_______________________________________________________

প্রদর্শনীর  আজ পুরস্কার বিতরণী দিবস তরুণ শিল্পী সাব্বির এরজলপাই রঙের মুক্তি   শীর্ষক পেইন্টিংটা  জুরি মন্ডলীর  রায়ে শ্রেষ্ঠ  ছবি হিসেবে রায় পেয়েছে তার ছবি সম্পর্কে কিছু বলার জন্য তাকে অনুরোধ করা হলো শান্ত ধীর স্থীর পায়ে তিনি মাইকের সম্মুখে দাঁড়ালেন দৃষ্টি শান্ত সুন্দর চোখ দুটো  কালের সীমানা  অতিক্রম করে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছে শ্রোতারা উদগ্রীব হয়ে বসে আছেন সাব্বির বলে চললেন তার ছবি সৃষ্টির আনুভূতিক পটভূমিকার কথা 
জলপাই রঙটা ভীষণ মিষ্টি জলপাই খেতেও বেশ লাগে আমাদের বাড়ীর উঠোনের কোণে একটা জলপাই গাছ আছে জলপাই ধরলে বাড়ীর তাবৎ ছেলেমেয়েদের কিযে হৈ হুল্লোড় জলপাই পেড়ে খেতে আমার শৈশবের দেখা জলপাই গাছ, জলপাই পেড়ে খাওয়ার আনন্দের মাঝ দিয়ে কখন যেন জলপাই রঙটাও আমার ভীষণ প্রিয় হয়ে গেল রঙটা যেন প্রকৃতির সর্বত্রই অকৃপণ ছড়িয়ে রয়েছে গাঢ় শ্যামল বর্ণ বলতে আমরা যাবুঝি জলপাই রঙটাও ঠিক ত্ইা বন্ধু, পরম , হৃদয়ের অনেক কাছাকাছি রঙটা আমার আমি ভালোবাসি দুচোখ ভরে দেখে নেই দিগন্ত থেকে দিগন্তের পানে শুধু জলপাই রঙ
একদিন - সে একাত্তরের যুদ্ধের সময়কার কথা আমি খুউব ছোট্ট তখন বিস্ময়ে আমি দেখলাম ্আমাদের  বাড়ীর পাশের কাঁচা রাস্তা দিয়ে সারি সারি সৈন্য আসছে সবাইর মাথায় জলপাই রঙের টুপি পরে জেনেছি ওটা হেলমেট মার্চপাষ্ট করে ওরা এগিয়ে যাচ্ছে রাজ্যের বিস্ময়ে আমার হতভম্ভ হবার যোগাড় যুদ্ধ, ওরা নাকি যুদ্ধ করবে আমাদেরকে ওরা বাঁচতে দেবে না আমি ভয় পেয়েছিলাম দৌড়ে মায়ের আঁচলে মুখ ঢেকে রাখতে চেষ্টা করেছিলাম মনে মনে আমি ওদের ঘৃণা করেছিলাম জলপ্ইা রঙের টুপি মাথায় পরাতে আমার সবচেপ্রিয় রঙটা মাথায় চড়িয়ে ওরা মানুষ হত্যা করবে ! প্রচন্ড ঘৃণায় আমার ছোট মুখটা রিরি করে উঠেছিলো ওরা আমার সবচেকাছের বন্ধু অন্তুর বাবাকে মেরেছে, শর্মিলাদির বড়বোনকে মেরেছে , আরো কত লোককে মেরেছে তার ফিরিস্তি যাবে না ওই কুৎসিত সৈন্যগুলো আমার, শুধু আমার নয়, অনেকের আপন রঙটা গায়ে চড়িয়ে কি বিভৎস কাজ না করেছে আমার পবিত্র শিশু মনটা পশ্চিমা সেনাদের পরাজয় কামনা করেছে অহর্নিশি চিৎকার করে বলতে চেয়েছি জলপাই রঙ নয় , নরকের আগুনের রঙ যেটা সেইটে তোমরা ব্যবহার করো; আমাদের প্রতিদিনের দেখা স্বপ্নের সাদামাটা রঙটাকে মুক্তি দাও না, যে কথাটা অতটুকুন বয়েসে বলতে ইচ্ছে করেছিলো আজ অনেক বড় হয়েও তাবলতে পারিনি
স্বাধীনতার সূর্য আমরা ছিনিয়ে এনেছি আদর যতœ আত্তি করে স্বাধীনতাকে বরণ করে নিলাম কিন্তু একি! জলপাই রঙের পোশাক পরা সৈন্যদের আবার তান্ডব মুর্তি কিন্তু এরা যে আমার ভাই আমার দেশের স্বাধীনতা রক্ষাকারী হৃদয়ের অতি নিকটের আমার বন্ধু যে এরা কেন ওরা আমাদের মারতে চায়? আবার রাজপথে ওরা জলপাই রঙের লড়ি ভর্তি হযে নেমে আসে গুলিতে বুক বিদীর্ণ হয় স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকার ঘরে ওরা আমাদের বন্দী করে রাখতে চায়
লেবানন, ভিয়েতনাম,কম্পুচিয়া , আফগানিস্থান পৃথিবীর সর্বত্র আজ জলপাই রঙ সঙ্গীণধারীদের উন্মত্ততা আমার প্রিয় রঙটাকে নিয়ে পৃথিবীব্যাপী চলছে ষড়যন্ত্র জলপাই রঙ মানে এখন আনবিক বোমা, হিরোশিমা ,নাগাসাকি, বিধ্বস্ত লেবানন, কাবুল ,রক্তাক্ত বাংলাদেশের রাজপথ, বারুদের গন্ধ
বেশ কিছুদিন যাবৎ আমি যেন আমার  অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দিহান হযে উঠেছিলাম আমাদের ভালোলাগার সবকিছু যেন পৃথিবী থেকে বিলীন হতে চললো আমি আমার ভেতরকার যন্ত্রণাটুকো সকলের মাঝে দেখতে চাই চাপা ক্ষোভটা প্রচন্ড বেগে বেড়িযে আসুক- সারা বিশ্বের তাবৎ মানুষের কন্ঠ থেকে এমনটিই চাই সে অভিব্যক্তিটাই একদিন ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুললামজলপাই রঙের মুক্তি চাইশীর্ষক আজকের পেইন্টিংটাতে এতোটুকো বলে শিল্পী থামলেন হলে পিনপতন নিস্তব্ধতা শ্রোতারা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন আর বার বার যেন  মৃদু উচ্চারণ করতে লাগলেনজলপাই রঙের মুক্তি চাই সবার চোখের সামনে যেন বিরাট ক্যানভাসটা ভেসে উঠলো- বিভৎস অন্ধকারের বুকে একটা শিশু  হাতে তার বিবর্ণ জলপাইর পাতা -চোখে মুখে তার বাঁচার এক অপূর্ব আর্তি- পুরো কম্পোজিশনটা
পরদিন সকালে শিল্পী সাব্বির এর ঘুম ভাঙলো একটু দেরীতে টেলিফোনে ভক্তদের জ্বালাতন থেকে মুক্তি পেতে রিসিভারটা ক্রাডল থেকে নামিয়ে রাখলেন দেশের সব নামী দামী পত্রিকায় শিল্পী সাব্বিরের গুণ কীর্তন করা হলো শিল্প সমালোচকরা বিরাট বিরাট প্রতিবেদন লিখে ফেললেন শিল্পীর রঙের ব্যবহার, আলো ছায়ার গভীরত্ব, মাধ্যম, ফর্ম, কন্টেন্ট সবই আলোচিত হলো বিরাট অংকের টাকা দিয়ে গতকাল প্রদর্শনীর পরপরই পেইন্টিংটা কিনে নিলেন শহরের এক ধনাঢ্য ব্যক্তি
 শিল্পী সাব্বির নিজেকে ভীষণ নিঃসঙ্গ বোধ করলেন তার ভীষণ একাকী থাকতে ইচ্ছে করলো ,ভীষণ একাকী বাসা থেকে বেড়িয়ে তিনি কোথায় যাবেন ভাবতে লাগলেন
____________________________________________________________
গল্পটি লিখেছিলাম ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রামের লালখান বাজারের থেকে বের হওয়া একটি স্যুভেনিরে যেটি স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বের হয়েছিলো
 

   
মুক্ত বাজার ও সংস্কৃতি
________________________________________________________________________________
মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে সব পণ্যকেই বাজারে  প্রবেশ করতে দেয়া হয়। সেখানে একটা প্রতিযোগিতা হয়। প্রতিযোগিতায় ক্রেতারা এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতাই  বলে দেবে কোন পণ্যটা বাজারে চলবে কোনটা ক্রমান্বয়ে বাজার থেকে বের হয়ে যাবে। আমার মত অতি সাধারণ বোদ্ধারা এত টুকুই বুঝতে পারি বাজার অর্থনীতির হালচাল।
সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও বাজার অর্থনীতির  একই প্রক্রিয়া চলে। বর্তমানে গ্লোবাল ভিলেজ কনসেপ্টে দেশগুলো আরও নিবিড় হচ্ছে । সংস্কৃতির অবাধ বিনিময় পুরো বিশ্বকে করে তুলছে আরও নিবিড় ও কাছাকাছি । দেশে দেশে উন্নয়নও হচ্ছে বিভিন্ন আঙ্গিকে । উন্নয়নের এই ধারাকে স্বাগত জানাতেই হয়।
সংস্কৃতির ভালো দিক আছে আবার খারাপ দিক আছে। আবার এটার  একটা আপেক্ষিক দিকও আছে।  পশ্চিমা দেশের অনেক জিনিষ আছে যা বাংলাদেশের মত উন্নয়নকামী দেশের জন্য সবসময় গ্রহণযোগ্য নয়। নয় এই অর্থে যে নেয়ার মত যে মন  মেজাজ থাকা দরকার তা  গড়ে না উঠলে  বরং হিতে বিপরীত হতে পারে। যে শিশু খেতেই পারেনা ঠিকমতো তাকে যদি  জাঙ্ক খাবার খেতে দিন তার কি অবস্থা হবে দেখুন। আমি বলতে চাইছি যে কোন পরিবর্তন তা পযেটিভ অথবা নেগেটিভ হউক সেটাকে হজম করে নেয়ার মত দক্ষতা থাকতে হবে।
বিশ্বায়নের কিছু বেদনা আছে। বেশীর ভাগ বেদনাটা ভোগ করে দরিদ্র দেশগুলো। সাধারণতো সংস্কৃতির দেয়া নেয়া বাণিজ্যে দরিদ্র দেশ নেয় ধনী দেশ দাতা সবসময়, তারা দেয় । সেটা খাদ্য থেকে শুরু করে সব কিছুতেই।  
এখানেই নীরবে এক সংকরায়ন চলে । প্রভাবশালী সংস্কৃতির সাথে বিজিত সংস্কৃতির । ভারতে এমনকি ইদানীং বাংলাদেশেও হিংলিশ এর মত  বেংলিশ ব্যাপক ভাবে চালু হতে যাচ্ছে। 
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আরও আছে  প্রতিবেশী সংস্কৃতির সংকরায়নের ব্যাপক  ঝুঁকি  । বিশেষত আকাশ সংস্কৃতির মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন ভাষাভাষী সংস্কৃতির অবাধ ও অনেকটা প্রভাবশালী ভুমিকা দেখা যায়। এখানে মুলত বাজার অর্থনীতির শর্ত  আর থাকে না।  কেননা আমরা জানি মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে সকলের বাজারে ঢোকার অধিকার আছে। প্রতিযোগিতা করার সুযোগ থাকে। কিন্তু বাংলাদশে একচেটিয়া ভাবে ভারতীয় চ্যানেলগুলো  রাজত্ব  করছে অথচ ভারতের কোথাও  বাংলাদেশের চ্যানেল চলে না।  
এই discrimination টা  বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে কিছুতেই মানা যায় না। অন্তত মুক্ত বাজার অর্থনীতির অন্যতম শর্ত প্রতিযোগিতা টুকু হতে পারত। টিকে থাকা না থাকা পরের বিষয়।


 

শিশুতোষ নয়-

মানুষের সাথে অন্যান্য প্রাণীকুলের অনেক প্রার্থক্য আছে । প্রার্থক্য গুলো  অনেকটা সাধারণকৃত । ছোট বুড়ো প্রায় সকলেই মোটা দাগের প্রার্থক্যগুলো বের করতে সময় নেন না। এই যে প্রার্থক্য তার কিন্তু রকম ফের আছে জন থেকে জনে। বয়েসের বিচারেও আছে বিভিন্নতা অভিজ্ঞতা  জ্ঞানের  ভেদরেখা বোঝা যায় এতে।
তো একদিন আমি অনেকটা দুস্টুমির ছলে একদল ছোট্ট শিশুর সাথে আলাপ  করতে শুরু করেছিলাম। নিতান্ত গল্পচ্ছলে কথাবার্তা। ৪জন শিশু। দুজন ছেলে শিশু ও দুজন মেয়ে শিশু। গড় বয়েস হবে ৮/৯ বছর। আমি ওদের সহজ করে নিলাম। খেলছিলাম । মাঝে মাঝে থেমে কথা বলছিলাম।
আমার কথপোকথন গুলো তুলে ধরছি;
-বলতো  কে বেশী ভালো  পশু,  পাখী না মানুষ ?
- ৪ জনের মধ্যে ২ জন বললো পাখীরা ভালো,  ১জন বললো মানুষ ভালো আর একজন বললো বনের পশুরা ভালো।
-কেন, কেন? জিজ্ঞেস করলাম।
- পাখীরা শুধু উড়ে, কিযে মজা উড়তে...... যারা পাখীর  পক্ষে তারা বললো।
- মানুষ ভালো, আমার আম্মু, আব্বু  আমাকে কত ভালোবাসে... মানুষের পক্ষে যে সে বললো।
-বনের পশুরাতো বনেই থাকে । ওরাতো আসেনা মানুষকে মারতে। ওদের আমরা চিড়িয়াখানায়  দেখতে পাই, আমার খুব ভালো লাগে ওদের দেখতে।
আমিও ওদের কথায় মাথা ঢুলিয়ে সায় দিয়ে যাচ্ছিলাম।
এবার আমি জিজ্ঞেস করলাম- আচ্ছা বন্ধুরা  এবার বলতো এসকল প্রানীদের সাথে মানুষের কি কি প্রার্থক্য আছে ?
ওরা কোন চিন্তা ভাবনা না করে অকপটে যে কথা গুলো বললো আমি সে কথাগুলো তুলে ধরছি:
- মানুষ অফিসে যায়, স্কুলে যায়, ছোটদের সবসময় আদর করেনা,  মানুষ ছবি আঁকতে পারে,  গান গায়,  মারা মারি করে,  ছোটদের আদর করে আবার মারে ও বকা দেয়............ ইত্যাদি  ইত্যাদি অনেক কিছু ।
- হঠাৎ করে একটা শিশু বলে ওঠলো- মানুষ যুদ্ধ করে,  গুম করে ও খুন করে------ মানুষ মিথ্যে বলেসত্যও বলে । প্রাণীরা  মিথ্যে বলে না । আরেকজন শিশু বলল।
আমি হতভম্বের মত তাকিয়ে ছিলাম শিশু গুলোর দিকে।
-             কি করে বুঝলে মিথ্যে বলেনা ?
-             মিথ্যে বললে  ওদের জেল ঘর থাকতো । একটা শিশু স্বগত হয়ে যেন বলল।

আমি ওদের সাথে আর কথা বাড়ালাম না। এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যেন আমাকে মুগ্ধ করল। এসব  শিশু জ্ঞানী নাকি কি বলব। নিজেকে মাঝে মাঝে খুব ছোট  মনে হয়। 




বাঘের হাড্ডিওয়ালার বাড়ী
 নাজমুল করিম হেলাল

হঠাৎ করে কালিপুর চৌধুরিপাড়ায় রটে গেল গাঁয়ে একটা বাঘ এসেছে পূবের পাহাড় থেকে বেশ জন বাঘটাকে দেখেছে হোসেন মিয়ার গরুটাকে নাকি ঘাড় চেপে ধরেছিলো কিন্তু যুৎ করতে পারেনি লোকজনের উপস্থিতিতে পালিয়ে গেছে হোসেন মিয়া নাকি নিজের চোখে বাঘটাকে দেখেছে আড়াই থেকে তিনহাত লম্বা বাঘটা দিনের বেলায় কেউ বাঘটাকে দেখেনি সবাই রাতের বেলায় দেখেছে
আর যায় কোথায় ! ছেলে-বুড়ো পাড়ার সবার ভেতরে এক মহা আতংক ঢুকে গেল্ সন্ধ্যে হবার আগেই পুরো পাড়াটা গভীর নিঃস্তব্ধতায় ডুবে যায় রাস্তায় একটা লোকও আর দেখা যায় না কখন কার ঘাড় হঠাৎ করে মটকে  ধরে তার কি ঠিক আছে বাবা মারা তার সন্তানদের শোনালেন অনেক অনেক আগের সব ভয়ংকর বাঘের কিচ্ছা কাহিনী যা তারা তাদের বাবা মায়েদের কাছে শুনেছেন পাহাড় আর বন ঘেঁষা এই গাঁয়ে এক সময় প্রচুর বাঘের  উপদ্রব হতো কত নিরীহ মানুষকে যে বাঘের পেটে যেতে হয়েছে এসব নানান কিচ্ছায় কালিপুরের চৌধুরী পাড়ার শিশুরা খেলাধুলো ছেড়ে যেন সব ফ্যাকাশে রক্তশুন্য রোগী হয়ে গেল
এভাবে ভয়ের মহড়া চলতে লাগলো পাড়াটিতে একদিন -ুদিন এভাবে সপ্তাহ গড়িয়ে গেল কিন্তু বাঘের কোন সাড়া পাওয়া গেল না কোন হামলাও  এলোনা কারোর উপরে
হোসেন মিয়া,বারিক জুলখু মিয়া তখন একাকী রাস্তায় হেঁটে বেড়ায়  কালীপুর স্কুলের শানবাঁধানো পুকুরঘাটে বসে বিড়ি ফুঁকে আর মজাসে গল্প করে অলৌকিক কিছু একটা করতে পেরে ওরা ভীষণ মজা পাচ্ছিলো ভাবতেই ওরা অবাক হলো , একটা মিথ্যে গুজবে পুরোটা পাড়াকে মুহুর্তে ওলট পালট করে দিল ওরা যেমন মজা পাচ্ছিলো তেমন ভয়ও পেতে লাগলো এক সময় যদি কোনভাবে পাড়ার লোক জেনে যায় ঘটনাটা তবে মেরে তুলো ধুনো করে ছাড়বে 
আট দিনের মাথায় ওরা ঘোষণা দিল বাঘটা মরে কঙ্কাল হয়ে পড়ে আছে পাহাড়ের পাদদেশে পাড়ার  সবাই হাঁফ ছেড়ে ছুটে গেল সেই পাহাড়ের পাদদেশে সবাই দেথলো , কিছু হাঁড়গোড় জড়ো অবস্থায় পড়ে আছে আশে পাশের গাঁ গেরাম থেকেও অনেকে ছুটে এলো সেই মৃত বাঘের হাঁড়গোড় দেখতে 
হোসেন মিয়া যেহেতু প্রথম দেখেছে হাঁড়গুলো এবং জমিটাও ছিল তার সেহেতু হাঁড়গুলোর মালিক বনতে দেরী হলো না ওর
কে যেন হঠাৎ জিঞ্জেস করলো ,’বাঘের মাথাটা কই?’
বোধহয় শেয়াল টেনে নিয়ে গেছে
 কিন্তু হাঁড়গুলোতে একটুও মাংশ লেগে নেই, বহুত পুরোন মনে হচ্ছে
মাংশ গুলো কুকুর শেয়ালে খেয়েছে এদিকেতো আসাই হয়নি কয়দিন হয়তো বাঘ মরেছে পাঁচ দিন আগে, রোদে জ্বলে হাঁড়গুলো পুরোন হয়ে গেছে হোসেন মিয়া বুঝিয়ে দেয় হোসেন মিয়া মৃত বাঘের কঙ্কালগুলো নিয়ে আসে বাড়ীতে যতœ করে সেগুলো তুলে রাখে সিন্দুকে
এরপর হোসেন মিয়ার নড়বড়ে হতদরিদ্র  বাড়িটির নাম হয়ে গেলবাঘের হাড্ডিওয়ালার বাড়ি পাড়ায় কে নতুন বেড়াতে এলে আঙ্গুল তুলে মানুষ দেখায় , যে বাড়িটা ওখানে আছে বাঘের হাড্ডি কেউ কেউ দেখতে চায়  হাঁড় হোসেন মিয়া গর্বিত হয়ে দেখায় সে হাঁড়গোড়
হোসেন মিয়া বারিক জুলখু মিয়া এক হলে মাঝে মাঝে হেসে দম বন্ধ হবার উপক্রম হয় বাঘের ভয় দেখাতে গিয়ে কতইনা কান্ড করতে হলো ওদের ওরা নিশ্চিত হয় , পৃথিবীতে এমন অনেক কিছুই হয়তো আছে ঠিক বাঘের হাড্ডিওয়ালার বাড়ির মতো
------------------------------------------------
অণু গল্পটি ছাপিয়েছিলো  ৩০ মার্চ ১৯৯৫ সালে চাটগাঁর দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকায়




মাছি, পিঁপড়ে অন্যান্য জটিলতা

নাজমুল করিম হেলাল

দিবা নিদ্রা লোকটির অভ্যেস দুপুরে খাবার পর যতটুকো সময় পান চোখ একটু বুজবেনই চেয়ারে বসা অবস্থায়ও একাজটি   নির্দ্বিধায় সারতে পারেন তিনি সাপ্তাহিক ছুটিছাটার দিন হলেতো কথাই নেই এক ন্গাড়ে দুতিন ঘন্টা ঘুমিয়ে তবে উঠবেন এসময়টাতে কেউ ডিষ্টার্ব করলে তার মেজাজ চড়ে যায়
এক  সাপ্তাাহিক ছুটির দিনে তিনি দুপুরে বেশ আয়েশে পিঠ লাগালেন বিছানায় শোবার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়লেন স্ত্রী বাসায়  ছিলেন না তার একমাত্র ছেলেটিকে নিয়ে বোনের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন সেদিন ঘুমিয়ে পড়ার আধ ঘন্টার মধ্যে তাকে ভীষণ বিরক্তি নিয়ে জেগে উঠতে হলো বেশ কিছু মাছি তার উদোম গায়ে বসে মুড়মুড়ি সৃষ্টি করছিলো বারবার তাড়িয়ে দিয়েও রক্ষা পাচ্ছিলেন না হঠাৎ প্রচন্ড রাগে তিনি বিছানা ছেড়ে উঠলেন নিমিষে মাছি মারার কৌশল ভেবে নিলেন  ঘর পরিষ্কার করার ঝারুটা যোগাড় করলেন তারপর একে একে বিছানায় তার আশেপাশে বসতে থাকা মাছি মারতে লাগলেন সব কটা মরা মাছি জড়ো করে নিলেন্ একটা কাগজের টুকরোয় তার রুমে যখন দেখলেন আর কোন মাছি নেই তখন মনে হলো বাকী রুমেওতো  মাছি থাকতে পারে ওদেরকে মারতে না পারলে তার বাকী ঘুমটাও মাটি হবে তিনি ঝারু নিয়ে এরপর ডাউনিং টেবিলে গেলেন সেখানে দেখলেন আরো মাছি ভনভন করে উড়ছে একই পদ্ধতিতে তিনি সবকটি মাছি মেরে ফেললেন এরপর সব জড়ো করলেন কাগজের টুকরোয় থাকার অন্য রুমটাতে বেশী মাছি পাননি ওগুলোকে মারলেন এবং জড়ো করলেন কাগজের টুকরোয়
লোকটা মরা মাছি গুলো ফেলে দিতে চাইলেননা এমনিতে তিনি ঠিক করলেন পিঁপড়েদের কিছু উপকার করা যায় সে মুহুর্তে তাদের ভালো খাদ্য যেকোন মরা কীটপতঙ্গ এরপর তিনি পিঁপড়েদের খোঁজে ঘরের দরজা খুললেন সামনে এক চিলতে বাগান ওখানে কিছু পিঁপড়েকে দেখলেন সারিবদ্ধ হেঁটে যাচ্ছে উনি কাগজের ঠুকরোয় রাখা পনের বিশটা মাছি ওদের সামনে রাখলেন আর অপেক্ষা করছিলেন পিঁপড়েরা কি করছে তা দেখার জন্য কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা গেল পিঁপড়ের দঙ্গল টেনেটেনে ওদের গর্তে ঢুকিয়ে নিচ্ছে লোকটার ভীষণ ভালো লাগলো মনে হলো অনেকদিন তিনি এধরনের আনন্দ পাননি  যতক্ষণ পর্যন্ত না শেষ মাছিটি টেনে গর্তে ঢুকালো ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি বসে থাকলেন সেখানে এক অস্বাভাবিক আনন্দের রেশ নিয়ে তিনি এরপর ঘরে এসে ঢুকলেন দরজা বন্ধ করলেন বুঝতে পারলেন এতক্ষণ যে কাজ করেছেন তাতে তার ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে ডাইনিং টেবিলের উপরে সকালে আনা একটা মিষ্টির প্যাকেট তাকে আকর্ষণ করলো তিনি জানেন প্যাকেটে দুএকটা মিষ্টি থাকতে পারে প্যাকেটটা খুলে যা দেখলেন তাতে তার ক্ষিদে নিমিষে উবে গেল দেখলেন অসংখ্য পিঁপড়ে মিষ্টি ুটোকে ছেঁকে ধরেছে লোকটা দেরি করলেন না প্যাকেটটা হাতে তুলে সোজা দরজা খুলে আবার বাগানে এলেন হাতে ধরা গ্যাস লাইটারটা জ্বালিয়ে প্যাকেটের গায়ে আগুন লাগিয়ে দিলেন যতক্ষণ না প্যাকেটটা পুড়ে ছাই হলো ততক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন  এবং একটা অদ্ভূত আনন্দের রেশ পেতে লাগলেন আবার যখন দরজা বন্ধ করে ঘরে ঢুকলেন তখন শুনতে পেলেন দেয়াল ঘড়িতে ঢং ঢং করে চারটা শব্দ হলো অর্থ্যাৎ বিকেল চারটা বেজে গেছে এরপর তার মনটা ভীষণ বিষন্ন হয়ে গেল এখনি তাকে ছুটতে হবে বৌকে আনার জন্য যে পথে যেতে হবে সে পথে সবসময় জ্যাম লেগে থাকে জ্যামে পড়লে এক দু ঘন্টা লেগে যেতে পারে এক অ্সম্ভব নিঃসহায় জীবনের মতো চোখ মেলে গাড়িতে বসে থাকা ছাড়া কোন উপায় নাই
___________________________________________________________________
অণু গল্পটি আশির দশকের মাঝামাঝি চাটগাঁর দৈনিক আজাদী পত্রিকায় ছাপিয়েছিলো
 




সরল ভাবনা 

আমি মাঝে মাঝে গণতন্ত্র  নিয়ে ভাবতে চেষ্টা করি এজন্য যে, এই প্রত্যয়টি হাল আমলে বহুল ব্যবহৃত ও চর্চিত একটি বিষয় । আমাদের টিভি টক শো গুলোতে বক্তারা গণতন্ত্রের জন্য সত্যিই যারপরনাই মানুষকে ও সরকারকে সচেতন করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে  যাচ্ছেন। তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু ভাবতে বেশ কষ্ট লাগে যে, গণতন্ত্র যাদের  জন্য সে আপামর মানুষের কাছে কিন্তু গণতন্ত্র  কিছুই নয়। কারণ তারা জানেনা আসলে গণতন্ত্র কি? এর ধরন কি অথবা এর সুফল বা কুফলটা কি? যদিও বলা হয়ে থাকে গণতন্ত্র হচ্ছে বৃহত্তর জনগনের শাসন।
এদেশের সিংহভাগ মানুষ দরিদ্র এবং  নিরক্ষর। তারা বেশির ভাগ থাকে গ্রামে। আমি জানি যদি গণতন্ত্র বিষয়ে এমুহূর্তে  কোন গবেষণা হয় তবে একটা সত্য অনিবার্য ভাবে বেরিয়ে আসবে যে, এদেশের সিংহভাগ মানুষ বলতে পারেনা আসলে  গণতন্ত্র কি এবং কেন দরকার
বরং তাদের অনেকের কাছে গণতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র বা পুঁজিতন্ত্র, সামরিক শাসন অথবা অন্য  যেকোনো তন্ত্র মন্ত্র ধর্তব্যের বিষয়  নয়।
তারা কিছুটা বুঝতে পারে বা তুলনা করে কার শাসনামল কেমন ছিল। কোন শাসনামলে তারা সুখে  থাকতে পেরেছিল। একটা তুলনামুলক চর্চা  করতে পারে বেশ কিছু লোক ।
ভোট দেয়া বা না দেয়া অনেক সময় এসব বিচার  বিশ্লেষণ করে তারা সিদ্ধান্ত   হয়ত নেয়তারপরেও এখন পর্যন্ত এদেশের ভাগ্য  পরিবর্তনে ভোট  কোন নিয়ামক শক্তি নয়।
গণতন্ত্রের কথা বুঝতে পারা এবং এর নিরবিচ্ছিন্ন ও যৌক্তিক চর্চা করার অসুবিধাটা বোধ করি গোড়াতেই হতবিহব্বল  হয়েছে। বৃহত্তর  জনগণের  শাসন অথচ  তারা জানেনা গণতন্ত্র সত্যিকার কোন দল আসলে এর প্রকৃত  স্বরূপ ফিরে পাবে। তাদের মতামতগুলো চোখের  সামনে দেখতে পাবে।    
  


আমাদের রাজনীতি

আমাদের রাজনীতি নিয়ে সাধারণ মানুষের তেমন একটা আগ্রহ নেই । যত আগ্রহ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের মানুষের। এদেশের উন্নয়নে সাধারণ মানুষের অবদান অনস্বীকার্য । কিন্তু রাষ্ট্রীয় পদ বা সুযোগ সুবিধা নেয়ার ক্ষেত্রে এ শ্রেণীর অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে ।
প্রায়শ আমরা রাজনীতির দৈন্যদশার কথা বলে থাকি। আমাদের দেশের কদর্য  রাজনীতির হালচাল দেখে আমরা এতই বীতশ্রদ্ধ হয়ে গেছি মাঝে মাঝে রাজনীতিকে ব্যক্তি জীবন থেকে যোজন যোজন দূরে রাখতে চাই। কিন্তু বললেই তো হলনা। মধ্যবিত্ত চিন্তার আগল থেকে কি মুক্তি পাওয়া যায় ? আর রাজনিতির থেকে দূরে থাকা কোনভাবেই  সম্ভব নয়। যদিওবা বেশির ভাগ মানুষের সক্রিয় রাজনীতি করা হয়না।
রাজনীতি অবশ্যই মানুষের জন্য। রাজনীতি সামাজিক বিজ্ঞানের আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে পুরনো  ও বহুল পরিমানে পঠিত বিষয়। অনেকে রাজনীতিকে এভাবে বলে থাকেন- রাজার নীতিই রাজনীতি। বর্তমান আর্থ সামাজিক অবস্থায় কোন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এভাবে সরলীকরণ মেনে নেবেন না। বরং রাজনীতি এখন বিবিধ ও সর্বত্রগামী জনগ্রাহ্য একটি বিষয়। বিশ্বব্যাপী গনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার উল্লম্ফনের যুগে রাজনীতিরতো  আরো সামাজিকীকরণ করা হয়েছে।   
কিন্তু বাস্তব যে চিত্র তাকে অস্বীকার করা যাবে না। রাজনীতির কেতাবি আলখেল্লা সরিয়ে নিলেই এর কদর্য দিক দিনের মত প্রস্ফুটিত হয়ে উঠে।
উন্নত দেশের ক্ষেত্রে যদিওবা  রাজনীতিবিদরা জনগণের কাছে জবাবদিহিতার একটা চর্চা  করে থাকে। সেটা তাদের দীর্ঘ গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার কার্যকরী ফল । সেখানে মানবাধিকার চর্চাসহ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা রাজনীতির আবহটা অনেক যৌক্তিক ও মানবিক করে তুলেছে। এইসব দেশেও রাজনীতিতে  সবাই সক্রিয় নয়। ওখানেও মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তের অবস্থান একেবারে মজবুত ।  সুবিধেটা ওদের ওখানেই  যে, উন্নত দেশগুলোর বেড়ে ওঠা অনেকটা স্বাধীন ভাবে সম্ভব হয়ে উঠেছিল । সামাজিক পরিবর্তনের ধারা একটা যৌক্তিক কার্যকারণ মেনে চলেছে। সামাজিক প্রথা, আইন ও মূল্যবোধ গুলোও সমসূত্রে গাঁথা হয়ে গেছে।
আমাদের দেশে যেটির উদ্ভাসন প্রক্রিয়াটা একেবারে বিপরীত ধাঁচের অর্থাৎ এখানে রাজনীতির আধুনিকতাটি এসেছে ঔপনিশিকতার ধ্যান ধারনাকে পুঁজি করে। স্বাধীন ভাবে রাজনীতির আবহটা গড়ে  উঠেনি। রাজনীতি এখানে ব্যক্তি স্বার্থে, গোষ্ঠী স্বার্থে এবং নিজের ফয়দা লুটার জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে।  খুব মজার ব্যাপার হোল , ঐ সকল উন্নত দেশ যারা  নিজ দেশে সবচে গণতান্ত্রিক তারা সাম্রাজ্য বিস্তারের সময় ঔপনিশিকদেশে কখনো গণতান্ত্রিক থাকতে পারেনি। সেলুকাস! অদ্ভুত এক রাজনীতি। কেননা তাদের সে অবস্থানটা ছিল তাদের স্বার্থের ও অস্তিত্তের।
যথাযথ কারণে আমাদের রাজনীতির চালচিত্র গণতন্ত্রসহ সকল মত ও পন্থার ছোবড়া বা অতি অনুকরণশীল।